রক্ত শুষে খায় এই ৫ টি গাছ, চিনে নিন পৃথিবীর ভয়ঙ্কর এই গাছগুলিকে
মাংসাশী গাছ, বা কার্নিভোরাস প্ল্যান্ট, পৃথিবীর উদ্ভিদজগতের বিস্ময়কর উদাহরণ, যারা উদ্ভিদ হিসেবে আলো ও মাটি থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি প্রাণী, বিশেষ করে ছোট পোকামাকড় শিকার করে জীবনধারণ করে। সাধারণত পুষ্টিহীন মাটি, বিশেষত নাইট্রোজেন ও অন্যান্য খনিজ উপাদানে ঘাটতি থাকলে এই গাছগুলো বিকল্প খাদ্য হিসেবে পোকামাকড়ের দিকে ঝোঁকে।
খবর সাতদিন ডেস্ক, 28 অক্টোবর: মাংসাশী গাছ, বা কার্নিভোরাস প্ল্যান্ট, পৃথিবীর উদ্ভিদজগতের বিস্ময়কর উদাহরণ, যারা উদ্ভিদ হিসেবে আলো ও মাটি থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি প্রাণী, বিশেষ করে ছোট পোকামাকড় শিকার করে জীবনধারণ করে। সাধারণত পুষ্টিহীন মাটি, বিশেষত নাইট্রোজেন ও অন্যান্য খনিজ উপাদানে ঘাটতি থাকলে এই গাছগুলো বিকল্প খাদ্য হিসেবে পোকামাকড়ের দিকে ঝোঁকে। সারা বিশ্বে প্রায় ৬০০ প্রজাতির মাংসাশী গাছ রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রজাতি নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
১. ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ (Venus Flytrap)
বৈজ্ঞানিক নাম: Dionaea muscipula
বিস্তৃতি: যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ও দক্ষিণ ক্যারোলিনা অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের পাতাগুলো জোড়া লাগানো এবং তীক্ষ্ণ দাঁতের মতো দেখতে, যা স্ন্যাপ ট্র্যাপ হিসেবে কাজ করে। যখন কোনও পোকা এর পাতায় বসে এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সংবেদনশীল চুলে স্পর্শ করে, তখন পাতাটি ঝাঁপিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। পোকাটি এরপর এনজাইম দ্বারা হজম হয়, এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উদ্ভিদটি শোষণ করে নেয়।
২. পিচার প্ল্যান্ট (Pitcher Plant)
বৈজ্ঞানিক নাম: Nepenthes, Sarracenia, Heliamphora ইত্যাদি বিভিন্ন গণের প্রজাতি।
বিস্তৃতি: এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জঙ্গল, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এবং মাদাগাস্কারে বিভিন্ন ধরনের পিচার প্ল্যান্ট দেখা যায়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: এই গাছের পাতাগুলো গহ্বর বা পিচারের আকারে বিবর্তিত হয়েছে, যার ভেতরে থাকে মধুর মতো পদার্থ। পোকামাকড় এই মধুর গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পিচারের ভেতরে ঢুকে পড়ে, কিন্তু ভেতরের মসৃণ ও ফাঁপা প্রাচীরের জন্য বের হতে পারে না। পোকাগুলো এরপর সেখানেই মারা যায় এবং হজমকারক রসে পচে গিয়ে উদ্ভিদটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করে।
৩. সানডিউ (Sundew)
বৈজ্ঞানিক নাম: Drosera
বিস্তৃতি: বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষত অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড ও আমেরিকায় পাওয়া যায়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: সানডিউ গাছের পাতাগুলো ছোট ছোট রোমে আচ্ছাদিত, যেগুলো আঠালো পদার্থে আবৃত থাকে। এই আঠা দেখতে অনেকটা শিশিরের মতো, যা পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে। একবার কোনও পোকা এই আঠায় আটকে গেলে পাতাগুলো ধীরে ধীরে পোকাটিকে আবৃত করে ফেলে এবং এনজাইমের সাহায্যে তাকে হজম করে।
৪. ব্লাডারওয়ার্ট (Bladderwort)
বৈজ্ঞানিক নাম: Utricularia
বিস্তৃতি: জলাশয়ে ও আর্দ্র মাটিতে, সারা বিশ্বে পাওয়া যায়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: এই গাছটি বিশেষ ধরনের ফাঁপা বেলুনের মতো অংশ নিয়ে গঠিত, যাকে ব্লাডার বলে। জলজ পোকা ও ক্ষুদ্র প্রাণী এর ফাঁদে পড়লে ব্লাডার খুলে তাদেরকে ভেতরে টেনে নেয় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উদ্ভিদটি শোষণ করে।
৫. বাটারওয়ার্ট (Butterwort)
বৈজ্ঞানিক নাম: Pinguicula
বিস্তৃতি: উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ায় পাওয়া যায়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: এই গাছের পাতাগুলো আঠালো পদার্থে ঢাকা থাকে, যা দেখতে অনেকটা মাখনের মতো এবং পোকামাকড় আকর্ষণ করে। কোনও পোকা পাতায় লেগে গেলে পাতাটি ধীরে ধীরে তাকে ভেতরের দিকে টেনে নেয় এবং পরে এনজাইম নিঃসৃত করে তাকে হজম করে।
৬. কোবরা লিলি (Cobra Lily)
বৈজ্ঞানিক নাম: Darlingtonia californica
বিস্তৃতি: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও ওরেগন রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: এই উদ্ভিদটির পাতাগুলো একটি কোবরা সাপের মাথার মতো দেখতে, যা একে 'কোবরা লিলি' নামটি দিয়েছে। এর ফাঁপা পাতার গহ্বরে ঢোকা পোকা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে বের হতে পারে না এবং অবশেষে সেখানে মারা যায়।