মিঠুন চক্রবর্তী, দাদাসাহেব ফালকে পুরষ্কার ও অজানা একটি গল্প
'তারানা'-এর পর ট্রেড ম্যাগাজিনে মিঠুনের ছবি সহ বের হয় ' বার্থ অফ এ স্টার' ওয়ালা কভার পেজ - প্রোডাকশন ভ্যানের উপর বসে শুটিং যাওয়া নায়ক থেকে অসহনীয় , কষ্টকর পাকদন্ডীতে সফল উত্তরণ -জীবনের চিত্রনাট্য সবসময় অতিনাটকীয় নয় বরং গড়পড়তা জীবনের থেকেও বাস্তবচিত হয়।
১৯৭৯, কাশ্মীর: 'তারানা'-এর শ্যুটিং চলছে। নায়ক নবাগত মিঠুন। নায়িকা সেই সময়ের সুপারস্টার রঞ্জিতা। ইউসমার্গ বলে একটা জায়গায় শুটিং হচ্ছিল সিনেমার। নায়িকা রঞ্জিতার জন্য বরাদ্দ ছিল আস্ত একটা ট্যাক্সি আর মিঠুনের জন্য প্রোডাকশন ভ্যান। প্রোডাকশন ভ্যানে রাজ্যের জিনিসপত্র আর বিশাল বিশাল বাক্সের উপর বসে শ্যুটিং স্পটে পৌঁছাতেন নায়ক মিঠুন। যেকোন বলিউডি সিনেমার স্ক্রিপ্ট হিসেবে দুর্ধর্ষ । 'তারানা'-এর পর ট্রেড ম্যাগাজিনে মিঠুনের ছবি সহ বের হয় ' বার্থ অফ এ স্টার' ওয়ালা কভার পেজ - প্রোডাকশন ভ্যানের উপর বসে শুটিং যাওয়া নায়ক থেকে অসহনীয় , কষ্টকর পাকদন্ডীতে সফল উত্তরণ -জীবনের চিত্রনাট্য সবসময় অতিনাটকীয় নয় বরং গড়পড়তা জীবনের থেকেও বাস্তবচিত হয়। যারা এহেন চিত্রনাট্যের সফল রূপায়ণ ঘটান তারা মিঠুন হন - বলিউডি ও জীবন উভয় ক্ষেত্রেই আর বাকিরা বুদ্বুবুদের মতো মিলিয়ে যান হয়তো।
তখন স্ট্রাগল করছেন মুম্বাইতে। সাইড রোলে অভিনয় শেষ করার পর প্রোডাকশন কন্ট্রোলারের কাছে প্রাপ্য টাকা চাইতে গিয়ে দেখেন প্রোডাকশন কন্ট্রোলার একশো টাকা কম দিচ্ছেন। ফুটপথে রাত কাটানো একটা ছেলের কাছে তখন একশো টাকা হাজার টাকারই সমান। প্রায় ভিক্ষে করার পরও সেদিন টাকাটা দেননি সেই প্রোডাকশন কন্ট্রোলার। পাশে বসা ডিরেক্টর তির্যক হেসে বলেছিলেন , " এর যা মুখের চেহারা তাতে এ হিরো হলে আমি ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে চলে যাবো।" অদৃষ্টের কি নিষ্ঠুর পরিহাস সেই পরিচালককেই পাঁচ বছর পর কিনা মিঠুনের বাড়ির সামনে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হয় তাঁকে নায়ক করে একটা সিনেমা বানানোর জন্য।
একটা সাক্ষাৎকরে একবার বলেছিলেন , " বাথরুমে গিয়ে কাঁদো কিন্তু বেরিয়ে এসো চোখে আগুন নিয়ে। বাকি পৃথিবীকে নিজের দুঃখটা না দেখিয়ে আঁকড়ে থাকো নিজের স্বপ্নকে , কোন গডফাদারকে নয়।" নিছক সাফল্য -ব্যর্থতার শুকনো খতিয়ানে তাই নয় বরং মিঠুন চক্রবর্তী ভাস্বর হয়ে থাকুন বাঙালির চেতনায় , দাঁত চাপা লড়াইয়ে আর সংগ্রামের মলাটে।
রইল দাদাসাহেব ফালকের শুভেচ্ছা।