পৃথিবীর এই দেশে একটিও মশা নেই! কারণ জানলে পিলে চমকে উঠবে

আইসল্যান্ড পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে কোনো মশা নেই, এ তথ্য অনেকের কাছেই চমকপ্রদ মনে হতে পারে। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং পরিবেশগত কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মশার অনুপস্থিতির পেছনে বেশ কিছু অনন্য ভৌগোলিক ও জলবায়ু সম্পর্কিত কারণ রয়েছে।

পৃথিবীর এই দেশে একটিও মশা নেই! কারণ জানলে পিলে চমকে উঠবে

খবর সাতদিন ডেস্ক, 19 অক্টোবর: মশা হল ছোট আকারের একটি দ্বিপক্ষী পতঙ্গ। বিশ্বজুড়ে মশার প্রায় ৩,৫০০ প্রজাতি পাওয়া যায়। এদের বেশিরভাগ প্রজাতি মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়, তবে কিছু প্রজাতি যেমন Aedes, Anopheles, এবং Culex রোগবাহী। মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, জিকা, চিকুনগুনিয়া, এবং ফাইলেরিয়াসিসের মতো মারাত্মক রোগ ছড়ায়। মশার জীবনচক্রে ডিম, লার্ভা, পিউপা এবং পূর্ণবয়স্ক মশা অন্তর্ভুক্ত। মশারা সাধারণত স্থির জলে ডিম পাড়ে। স্ত্রী মশা রক্ত শোষণ করে প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংগ্রহ করে। মশারা গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বিশেষভাবে প্রচুর পরিমাণে বিস্তৃত।

আইসল্যান্ড পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে কোনো মশা নেই, এ তথ্য অনেকের কাছেই চমকপ্রদ মনে হতে পারে। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং পরিবেশগত কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মশার অনুপস্থিতির পেছনে বেশ কিছু অনন্য ভৌগোলিক ও জলবায়ু সম্পর্কিত কারণ রয়েছে।

মশার অনুপস্থিতির কারণ

১. চরম ঠান্ডা আবহাওয়া: আইসল্যান্ডের জলবায়ু বেশ শীতল এবং হিমায়িত। শীতকালে দেশটির তাপমাত্রা দীর্ঘ সময় ধরে শূন্য ডিগ্রির নিচে থাকে, যা মশার ডিম, লার্ভা বা প্রাপ্তবয়স্ক মশার বেঁচে থাকার জন্য অনুকূল নয়। মশার জীবনচক্রের প্রতিটি ধাপে উষ্ণতা এবং বিশেষত নির্দিষ্ট তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়, যা আইসল্যান্ডে নেই।

2. অনিয়মিত মৌসুমি পরিবর্তন: আইসল্যান্ডে মৌসুমের মধ্যে তাপমাত্রার উঠানামা খুব দ্রুত ঘটে। শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে তাপমাত্রা এত দ্রুত পরিবর্তন হয় যে, মশারা তাদের জীবনচক্র সম্পূর্ণ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায় না। মশারা সাধারণত পানি, বিশেষ করে স্থির পানিতে ডিম পাড়ে এবং সেখানেই লার্ভা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা তৈরি হয়। কিন্তু আইসল্যান্ডে পানি খুব দ্রুত হিমায়িত হয়ে যায়, ফলে মশার বংশবৃদ্ধি অসম্ভব হয়ে পড়ে। 

3. স্থির জলাশয়ের অভাব: মশার বংশবৃদ্ধির জন্য স্থির জলের প্রয়োজন, যা আইসল্যান্ডে খুব কম। সেখানে ঝর্ণা, নদী বা হ্রদের পানি সাধারণত দ্রুত বয়ে যায় এবং সেই সাথে বরফেও জমে যায়। এই পরিবেশে মশার ডিম বা লার্ভার টিকে থাকা কঠিন। স্থির জলের অভাবের কারণে মশা বংশবৃদ্ধির সুযোগ পায় না।

মশাহীন পরিবেশের প্রভাব

আইসল্যান্ডে মশার অনুপস্থিতি মানুষের জীবনযাত্রার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছে। মশার কারণে সৃষ্ট অসুবিধা বা রোগের বিস্তার এখানে নেই, যা অন্যান্য অনেক দেশে একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, বা জিকা ভাইরাসের মতো মশাবাহিত রোগের কারণে যেসব দেশে বিপর্যয় দেখা দেয়, সেই তুলনায় আইসল্যান্ড একেবারে নিরাপদ।

বন্যপ্রাণী ও পরিবেশগত ভারসাম্য

মশা যেহেতু খাদ্যশৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষত অনেক ছোট পাখি ও প্রাণীর খাদ্য হিসেবে কাজ করে, আইসল্যান্ডে এর অনুপস্থিতি পরিবেশগত ভারসাম্যের উপর কিছু প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এই দেশের বিশেষ ভূগোল এবং আবহাওয়া অন্যান্য প্রজাতির জীবজন্তুদের অভিযোজনের সুযোগ দিয়েছে, ফলে মশার অভাব এখানকার বাস্তুতন্ত্রে বড় কোনো সমস্যার সৃষ্টি করেনি।