কলকাতার বিরিয়ানিতে কেন আলু দেওয়া হয়? ইতিহাস জানলে অবাক হবেন
১৮৫৬ সালে অওধের নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ ব্রিটিশদের দ্বারা সিংহাসনচ্যুত হন এবং বাধ্য হয়ে কলকাতায় চলে আসেন। তাঁর সঙ্গে কলকাতায় আসেন তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং বিশ্বস্ত রাঁধুনিরা। নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ ছিলেন এক শৌখিন রুচিসম্পন্ন ব্যক্তি, এবং কলকাতায় এসেও তিনি তার অভিজাত জীবনধারা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। তিনি মাঝে মধ্যেই আত্মীয় এবং বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিরিয়ানির দাওয়াত দিতেন। তবে, তার আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটেছিল, কারণ ব্রিটিশদের দেওয়া মাসোহারা তার নবাবি রুচিকে সন্তুষ্ট করতে পারছিল না।
খবর সাতদিন ডেস্ক, 18 অক্টোবর: কলকাতার বিরিয়ানিতে আলুর সংযোজন এক বিশেষ ঐতিহাসিক পরম্পরা বহন করে, যা বাঙালির রান্নার সংস্কৃতির একটি অঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিরিয়ানি, মূলত মুঘলদের প্রিয় খাবার, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে। তবে, কলকাতার বিরিয়ানিতে আলুর অনন্য সংযোজনের পিছনে যে গল্পটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত, তা হল অওধের নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের কলকাতায় আগমন এবং তার সঙ্গে লখনউয়ের বিরিয়ানির মিশ্রণ।
নবাবের আগমন এবং আলুর সংযোজন
১৮৫৬ সালে অওধের নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ ব্রিটিশদের দ্বারা সিংহাসনচ্যুত হন এবং বাধ্য হয়ে কলকাতায় চলে আসেন। তাঁর সঙ্গে কলকাতায় আসেন তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং বিশ্বস্ত রাঁধুনিরা। নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ ছিলেন এক শৌখিন রুচিসম্পন্ন ব্যক্তি, এবং কলকাতায় এসেও তিনি তার অভিজাত জীবনধারা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। তিনি মাঝে মধ্যেই আত্মীয় এবং বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিরিয়ানির দাওয়াত দিতেন। তবে, তার আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটেছিল, কারণ ব্রিটিশদের দেওয়া মাসোহারা তার নবাবি রুচিকে সন্তুষ্ট করতে পারছিল না।
এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে, বিরিয়ানিতে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে তা পূরণ করার জন্য আলুর ব্যবহার শুরু হয়। সেই সময়, পর্তুগিজদের হাত ধরে ভারতে আসা আলু মাংসের তুলনায় সস্তা ছিল, যা নবাবের সীমিত বাজেটে বিরিয়ানির স্বাদ বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। ধীরে ধীরে এই আলুর বিরিয়ানি কলকাতায় জনপ্রিয়তা অর্জন করে, এবং আজকের দিনে তা বাঙালির নিজস্ব বিরিয়ানি সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে।
বাঙালির আলুর প্রতি প্রেম
তবে, শুধু নবাবের আর্থিক সংকটই নয়, অনেকেই মনে করেন যে বাঙালির রান্নায় সবকিছুতেই আলু যোগ করার প্রবণতাও এর পিছনে একটি কারণ হতে পারে। আলু বাঙালির রান্নায় বহুল ব্যবহৃত একটি উপকরণ, এবং অনেকেই মনে করেন যে এই আলুর প্রতি বাঙালির ভালোবাসা থেকেই বিরিয়ানিতে আলুর সংযোজন ঘটেছে। এটি কেবল ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই নয়, বরং বাঙালির স্বাদ এবং রুচির সঙ্গে সম্পূর্ণ মিল রেখে গড়ে উঠেছে।
বিরিয়ানির আধুনিক রূপ
প্রথমে বিরিয়ানি ছিল কলকাতার বড় রেস্তোরাঁগুলির বিশেষ পদ, যা অভিজাত শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি শহরের প্রায় প্রতিটি জায়গায় পাওয়া যায়, এবং আলুসহ বিরিয়ানি কলকাতার ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে, এই আলুসহ বিরিয়ানির একটি স্বতন্ত্র স্বাদ এবং সুনাম রয়েছে, যা শুধু বাঙালির রান্নার ঐতিহ্যকেই সমৃদ্ধ করেনি, বরং কলকাতাকে বিরিয়ানির মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে তুলে ধরেছে।